শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৬

এডওয়ার্ড স্নোডেন

এডওয়ার্ড স্নোডেন 

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
এডওয়ার্ড স্নোডেন
Edward Snowden-2.jpg
জন্মএডওয়ার্ড জোসেফ স্নোডেন
জুন ২১, ১৯৮৩ (বয়স ৩৩)[১]
উইলমিংটন, নর্থ ক্যারোলিনা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
অবস্থাঅজানা[২]
জাতীয়তামার্কিন
পেশাসিস্টেম অ্যাডমিনিস্ত্রেতর
যে জন্য পরিচিতপ্রিজম (নজরদারি প্রকল্প)

এডওয়ার্ড স্নোডেন.
এডওয়ার্ড স্নোডেন (ইংরেজিEdward Snowdenজন্ম২১ জুন১৯৮৩) আমেরিকার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সাবেক সদস্য যিনি দেশটির ইন্টারনেট নজরদারি কর্মসূচির তথ্য ফাঁস করে দিয়ে বৈশ্বিকভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন।[৩]
এডওয়ার্ড স্নোডেন ফাঁস করে দিয়েছেন যে প্রিজম কর্মসূচির আওতায় ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট, ইয়াহু, ইউটিউব এবং অ্যাপলসহ বিভিন্ন ইন্টারনেট জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানকে না জানিয়েই তাদের সার্ভারে সরাসরি প্রবেশ করে তথ্য সংগ্রহ করে আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসআই) ও ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) যা ছিল মারাত্মক এবং অসাংবিধানিক কাজ।[৩]
স্নোডেনকে নিয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তাকে বলা হয়েছে একজন বীর,[৪][৫] গোপন তথ্য ফাঁসকারী,[৬][৭][৮][৯] ভিন্নমতাবলম্বী[১০], বিশ্বাসঘাতক[১১][১২]এবং দেশপ্রেমিক।[১৩][১৪] স্নোডেন তাঁর কার্যকলাপ সম্বন্ধে বলেছেন যে তিনি যা করেছেন তা হল, জনগণের বিরুদ্ধে এবং তাদের নামে গোপনে যেসব করা হচ্ছে তা জনসাধারণকে অবহিত করা।[১৫] অনেক মার্কিন কর্মকর্তা স্নোডেনের কার্যকলাপকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যাপক ক্ষতি হিসেবে অভিহিত করেছে, অন্যদিকে অনেকে আবার তাঁর এসব কার্যকলাপকে সাধুবাদ জানিয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার[১৬][১৭] স্নোডেনের প্রকাশিত তথ্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তা যুক্তরাষ্ট্রে এবং বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বিষয় যেমন- জনসাধারণের উপর নজরদারি, সরকারী গোপনীয়তা এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও তথ্যের গোপনীয়তার উপর বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।

শৈশব ও শিক্ষা[সম্পাদনা]

স্নোডেনের পুরো নাম এডওয়ার্ড জোসেফ স্নোডেন। ৩২ বছর বয়সী স্নোডেন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা রাজ্যের এলিজাবেথ সিটিতে জন্মগ্রহণ করেন ও বেড়ে উঠেন।[১৮]পেনসিলভানিয়ানিবাসী তার বাবা ইউএস কোস্টগার্ডের সাবেক কর্মকর্তা ছিলেন।[১৯] ম্যারিল্যান্ডে ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে ক্লার্ক হিসেবে কাজ করেন স্নোডেনের মা। [১৮][২০] বড় বোন একজন এটর্নি।

ক্যারিয়ার[সম্পাদনা]

২০০৪-এর ৭ই মে স্নোডেন স্পেশাল ফোর্সের অংশ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ইউএস আর্মিতে যোগ দেন। ট্রেনিং চলাকালে দুর্ঘটনায় উভয় পা ভেঙে গেলে একই বছর সেপ্টেম্বরের ২৭ তারিখ তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।[১][২১] পরবর্তীতে ইউনিভার্সিটি অফ ম্যারিল্যান্ডে এনএসএ’র একটি গোপন ভবনের সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ করেন।[২২] এরপর তিনি আইটি সিকিউরিটির উপর কাজ করতে সিআইএ-তে যোগ দেন।[২৩]
২০০৭ সালে সিআইএ তাকে কূটনীতিবিদ হিসেবে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় স্থানান্তরিত করে। সেখানে তার দায়িত্ব ছিল কম্পিউটার নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা বিধান করা।[২৪] ২০০৯ সালে সিআইএ’র কাজ ছেড়ে দেন এবং জাপানের সামরিক ঘাঁটিতে এনএসএ ডিপার্টমেন্টের এক প্রাইভেট কন্ট্রাক্টর হিসেবে যোগ দেন।
২০১৩ সালের বছর মে মাসে এনএসএতে থেকে যাওয়ার আগের ৩ মাস পর্যন্ত হাওয়াইতে এনএসএ-তে সিস্টেম এডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে কাজ করেন।[২৫][২৬][২৭] এনএসএ’র জন্য কাজ করা বুজ অ্যালেন হ্যামিল্টন কনসাল্টিং ফার্মের হয়ে তিনি ওই পদে কর্মরত ছিলেন। স্নোডেনের জীবন যাত্রা নিতান্ত আরামদায়ক ছিল। মাসিক আয় ছিল ২০০০০০ (দুই লাখ) ডলার।[২৮] এনএসএ থেকে ছুটি নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে পালিয়ে হংকং আসেন। ২০১৩ সালের ১০ জুন তারিখ হংকং থেকে দ্য গার্ডিয়ানে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নিরাপত্তাবিষয়ক গোপন তথ্য ফাঁসকারী হিসেবে নিজের পরিচয় প্রকাশ করেন। ২০১৩ সালে একজন প্রাক্তন নরুইজিয়ান মন্ত্রী স্নোডেনের নাম নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য মনোনীত করেন।[২৯]

গণমাধ্যমে গোপন তথ্য প্রকাশ[সম্পাদনা]

২০১৩ এর জানুয়ারিতে স্নোডেন প্রথমে ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র নির্মাতা লরা পয়ট্রাসের সাথে যোগাযোগ করেন। পয়ট্রাসের উক্তি অনুসারে, উইলিয়াম বেনি নামক একজন গোপন নজরদারির তথ্য ফাসকারী এনএসএ-এর কর্মকর্তার উপর পয়ট্রাসের রিপোর্ট দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে দেখার পর স্নোডেন পয়ট্রাসের সাথে যোগাযোগ করে। পয়ট্রাস ফ্রিডম অফ দত প্রেস ফাউন্ডেশনের একজন বোর্ড সদস্য। এনএসএ-এর কর্মকর্তা গ্লেন গ্রিনওয়াল্ড এই ফাউন্ডেশনের একজন বোর্ড সদস্য। দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক রিপোর্টে গ্রিনওয়াল্ড বলেন যে, তিনি ২০১৩ এর ফেব্রুয়ারি থেকে স্নোডেনের সাথে কাজ করেছেন। দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক বার্টন গেলম্যানের সাথে স্নোডেনের প্রথম সাক্ষাৎ হয় ২০১৩ এর ১৬ মে। গেলম্যান বলেছেন যে, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট ৭২ ঘন্টার মধ্যে স্নোডেনের দেয়া গোপন তথ্যের দলিলসমূহ প্রকাশের ব্যাপারে নিশ্চয়তা না দিতে পারার কথা বলার পরেই কেবল গ্রিনওয়াল্ড তথ্য ফাঁসের সাথে যুক্ত হয়েছে। গেলম্যান আরও বলেন যে, তাঁর প্রতিষ্ঠান (দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট) কখন বা গোপন তথ্য-সম্বলিত দলিলের কতখানি প্রকাশ করবে, তার নিশ্চয়তা দেয়নি। এরপর স্নোডেন তার সাথে আর কোন যোগাযোগ করতে অস্বীকার করেন।
এসমস্ত যোগাযোগের জন্য স্নোডেন এনক্রিপ্টেড ইমেইল ব্যবহার করেছিলেন। তাঁর কোডনেম ছিল "Verax"। গেলম্যানের দেয়া তথ্য অনুসারে সরাসরি সাক্ষাতের পূর্বে স্নোডেন লিখেছিলেন, "আমি উপলব্ধি করি যে আমার কার্যাবলির জন্য আমাকে ভুগতে হতে পারে। জনগণের কাছে এসমস্ত তথ্য পৌছামাত্র আমার কাজ শেষ হবে।"
২০১৩ এর মে মাসে স্নায়ুরোগের কারণে স্নোডেনকে এনএসএ থেকে সাময়িক ছুটির অনুমতি দেয়া হয়। মে-এর ২০ তারিখে স্নোডেন হং কং-এ যান। এনএসএ সংক্রান্ত গোপন তথ্যের প্রাথমিক নিবন্ধ প্রকাশের সময় স্নোডেন হং কং -এ অবস্থান করছিলেন। এসব তথ্যের মাধ্যমে স্নোডেন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু গোপন নজরদারি প্রকল্প ও তাদের কার্যাদির ঘটনা প্রকাশ করেন। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে প্রিজম (নজরদারি প্রকল্প), এনএসএ কল ডাটাবেস, বাউন্ডলেস ইনফরম্যান্ট। তিনি এনএসএ-এর ব্রিটিশ সহযোগী GCHQ-এর গোপন নজরদারি প্রকল্প টেম্পোরা-এর বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেন। ২০১৩ এর জুলাই-এ গ্রিনওয়াল্ড বলেন যে, স্নোডেনের কাছে এনএসএ সম্পর্কে আরো স্পর্শকাতর তথ্য রয়েছে, যা তিনি প্রকাশ করেননি।

প্রেরণা[সম্পাদনা]

২০১৩ এর ৯ জুন তারিখে দ্য গার্ডিয়ান স্নোডেনের অনুরোধ সাপেক্ষে তাঁর পরিচয় প্রকাশ করে। স্নোডেন ব্যাখ্যা করেন, " আমার পরিচয় গোপন করার কোন ইচ্ছা নেই, কারণ আমি জানি কোন ভুল করিনি।" তিনি বলেন, পরিচয় প্রকাশের মাধ্যমে তিনি তাঁর সহকর্মীদের হয়রানির আশঙ্কা থেকে রক্ষা করেছেন। কারণ পরিচয় অপ্রকাশিত থাকলে তাঁর সহকর্মীদের মধ্যে কে এসব তথ্য ফাঁস করেছে, সে ব্যাপারে ব্যাপক অনুসন্ধান চলতো। স্নোডেন তাঁর এই তথ্য ফাঁসের ব্যাপারে বলেন, " আমি এমন সমাজে থাকতে চাই না যে সমাজ তার নাগরিকদের উপরে এসব কাজ করে। আমি এমন কোন পৃথিবীতে থাকতে চাই না, যেখানে আমি যা করি এবং বলি - তার সবই ধারণ করা হয়। আমার একমাত্র উদ্দেশ্য হল, জনসাধারণকে অবহিত করা যে তাদের নামে এবং তাদের বিরুদ্ধে কী করা হয়।"

নির্বাসনের জীবন[সম্পাদনা]

২০১৩ সালের নভেম্বরে তিনি ইউ এস গভারমেন্টের কাছে অনুকম্পা প্রার্থনা করেন কিন্তু প্রত্যাখ্যাত হন। তার প্রকাশিত তথ্যের আলোড়ন কয়েক মাস ধরে চলতে থাকে। ২০১৪ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সরকারি নজরদারির ভয় প্রশমনের জন্য ইউ এস এটর্নি জেনারেলকে তার দেশের নজরদারি কর্মসূচী পর্যালোচনা করার নির্দেশ দেন। নিবাসনে থাকা সত্ত্বেও স্নোডেন আলোচিত ব্যক্তিত্ব হয়ে রইলেন। আর এর মধ্যে ইউ এস মিলিটারি জানায় স্নোডেনের ফাসকৃত তথ্যের জন্য তাদের নিরাপত্তা অবকাঠামো কয়েকশ কোটি ডলার খতির মুখে পড়তে পারে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thanks for your nice comments............


b.reg
ANIK SABBIR