শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৬

নিষিদ্ধ কথা

নিষিদ্ধ কথা

নির্মাতা রোকেয়া প্রাচীর অভিযোগের ভিত্তিতে ডিরেক্টরস গিল্ডসহ পাঁচটি সংগঠন এক বছরের জন্য বয়কট করেছে অভিনেত্রী প্রসূন আজাদকে। বিষয়টি নিয়ে বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। পক্ষে-বিপক্ষে চলছে যুক্তিতর্ক। সেদিন আসলে কী ঘটেছিল? বিষয়টি নিয়ে কী বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা? শুনেছেন সাইমুম সাদ


নিষিদ্ধ প্রসূনের ক্ষোভ
আমি তাদের [ডিরেক্টরস গিল্ড] বেতনভুক কর্মচারী নই। আমি শিল্পী। তাদের পয়সায় আমি চলি না। তারা আমাকে নিষিদ্ধ করতে পারে না। উল্টো আমি তাদের মানা করতে পারি। কারণ আমি স্বাধীন। আমি চিন্তা করব কোন ডিরেক্টরের কাজ করব, কার করব না। তারা জোর করে বলতে পারে না, ওর সঙ্গে কাজ করো।
আসলে ডিরেক্টরস গিল্ড নামে একটা কিছু আছে, সেটার আওয়াজ দেওয়ার জন্যই মূলত এই কাজটি করেছে। তারা একটি নায়িকা পেয়েছে, যার ঘাড় ত্যাড়া। আমার সঙ্গে যা করেছে, অন্য মেয়ে হলে এতটা আওয়াজ হতো না। তারা স্যরি বলত। কিন্তু আমি স্যরি বলিনি। আমাকে ইউজ করা হয়েছে।
আর্টিস্ট হিসেবে ডিরেক্টরস গিল্ড আমাকে তৈরি করেনি। আমি একা ইন্ডাস্ট্রিতে স্ট্রাগল করেছি। জীবনে অনেক প্রবলেমে পড়েছি, কখনোই তারা আমার পাশে থাকেনি। তাহলে তাদের স্যরি বলব কেন? ইন্ডাস্ট্রি থেকে এখনো ছয় লাখের মতো টাকা পাই। ডিরেক্টরস গিল্ড আমাকে কখনোই হেল্প করেনি। কখনো বলেনি—প্রসূন, তোমার কী কী প্রবলেম আছে?

কী ঘটেছিল : প্রসূনের ভাষ্য
মালিবাগ থেকে ইস্কাটন [রোকেয়া প্রাচীর বাসা] যাওয়ার কথা ছিল। সেখান থেকে আমরা ফরিদপুর যাব শুটিংয়ে। সকালে উঠেই ইস্কাটনের দিকে রওনা দিলাম। মৌচাকে এসে খুব জ্যামে পড়েছি। বিষয়টি মেসেজে জানিয়েছি তাঁকে। সঙ্গে এও জানিয়েছি, আমার সঙ্গে এক ছোট ভাই যাবে। ইস্কাটনে পৌঁছানোর পর তিনি রাস্তায় দাঁড়িয়েই চিত্কার শুরু করে দিলেন। সাড়ে ৭টার জায়গায় ৮টায় কেন এলাম। রাস্তায় অনেক মানুষজন, আমি তাঁকে বললাম, গাড়িতে আসেন। বসেন। গাড়িতে বসে কথা বলি। তিনি বললেন, ‘সামনের সিটে কে বসা? ওকে বলো নামতে। বাসে করে যাক।’ কিন্তু ছেলেটা আমার সঙ্গে যাবে। যেহেতু শুটিংটা ব্রোথেলে। আগেও শুটিং করেছি সেখানে, সাত দিন ছিলাম। জায়গাটা সম্পর্কে আমার ধারণা আছে। সঙ্গে একজন থাকলে ভালো। তিনি বললেন, ‘ওর জন্য রিসোর্ট ভাড়া করা নাই।’ আমি ছোট ভাইকে বললাম, রিসোর্টের দরকার কী। অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টররা যেখানে থাকবে, সেখানে থাকতে পারবি না? তাঁর সামনেই ও বলেছে, পারবে। তার পরও তিনি চিত্কার-চেঁচামেচি করলেন। আমি বললাম, আরো দুইটা দিন আপনার সঙ্গে থাকতে হবে। এ রকম করলে কিভাবে কাজ করব! মানসিকভাবে কষ্ট পেয়েছিলাম। কারণ আমি তাঁর ভক্ত ছিলাম। তার চেয়েও বড় কথা, আমি একজন অভিনেত্রী। আমি যখন সেটে যাব, সম্মানই আশা করব। তাঁকে বললাম, ‘ম্যাডাম, নিশ্চয় একটা ব্যাকআপ আর্টিস্ট রেখেছেন, না হলে আমাকে খেপাতেন না। আপনি আমার মায়ের কলিগের ওয়াইফ। সেই হিসাবে আমার মায়ের মতো। সালাম দিচ্ছি। আমি কাজ করছি না। বাসায় চলে যাচ্ছি। বাসায় আসার পর জানতে পারলাম, তিনি আমার নাম মেনশন করে ফেসবুকে কিসব যেন লিখেছেন। আমিও লিখলাম, তবে তাঁর নাম মেনশন করিনি। পরে তিনি যখন নাম মেনশন করা শুরু করলেন, তখন বুঝে গেছি, পুরো ব্যাপারটা আসলে পলিটিকস।

রোকেয়া প্রাচীর কথা 

অলরেডি সে ইস্কাটনে দেড় ঘণ্টার মতো লেট করে এসেছে। সঙ্গে একটা ছেলে নিয়ে এসেছিল। সে তার আপন ভাইও না, আবার অ্যাসিস্ট্যান্টও না। ছেলেটি কে? ও বলল, আমাদের সঙ্গে যাবে। বললাম, আমরা যেখানে যাব, সেখানে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। ফরিদপুর যেতে যেতে রাত হয়ে যাবে। তার চেয়ে বরং আমরা চলে যাই, ছেলেটা পরদিন আসুক। কিন্তু ও ছেলেটিকে ছাড়া যাবেই না। বোঝানোর চেষ্টা করলাম, তুমি যদি অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়ে আসতে, ড্রাইভারের সঙ্গে থাকতে দিতাম আর তোমার আপন ভাই হলে আমাদের সঙ্গে ফ্লোরিং করে রাখতাম। কিন্তু ওকে আমি রাখব কোথায়? ফরিদপুরের মতো জায়গায় রাত ২টায় সার্কিট হাউসে একজনকে নিয়ে গেলেই তো রাখতে পারব না। এই প্রশ্নগুলো ও নিতে পারছিল না। ও বলছিল, ‘আপনি আমাকে পেইন দিচ্ছেন।’ বোঝানোর চেষ্টা করলাম।
শেষ পর্যন্ত শুটিংয়ে গেলই না। বাসায় ফিরে গেল। শুটিং প্যাকআপ হলো। প্রত্যেককে সেদিনের পেমেন্ট করতে হয়েছে। সময় নষ্ট হয়েছে। খরচটা বেশি হয়েছে। মানসিকভাবে টর্চারের শিকার হয়েছি। পরে ‘সেরা নাচিয়ে’ সামিয়াকে দিয়ে নাটকটা শেষ করেছি। এদিকে প্রসূন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে, একজন ডিরেক্টর তার খারাপ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য তাকে একা শুটিংয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। যেহেতু সে তার ভাইকে নিয়ে যাচ্ছিল, তার উদ্দেশ্য চরিতার্থ হয়নি। স্ট্যাটাসটি পড়ে পরিচালক এস এ হক অলিক ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছেন, কার সম্পর্কে লিখেছেন? আমি ডিরেক্টরস গিল্ডে অভিযোগ করলাম। পরে সে আরো আজেবাজে কথা লিখেছে ফেসবুকে। লেখাটা শুধু আমার বিরুদ্ধে নয়, পুরো ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধে। অশ্লীল মন্তব্যের জন্য ডিরেক্টরস গিল্ড তাকে চিঠি পাঠায়। সেটা কেয়ার করেনি। স্যরি বলেনি। শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য ওকে বয়কট করেছে গিল্ডসহ কয়েকটি সংগঠন। আমরা সামাজিক জায়গায় বাস করি। সৌজন্যের দরকার আছে, শালীনতার দরকার আছে। একজন আর্টিস্ট চাইলেই একটা ছেলেকে শুটিংয়ে নিয়ে যেতে পারে না। সবাই মিলে যেহেতু তাকে বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করেছি। শালীন থাকাটা খুব দরকার। প্রফেশনালিজম মেইনটেইন করাটাও উচিত।

গাজী রাকায়েতের কথা 

সভাপতি, ডিরেক্টরস গিল্ড
পাঁচটি সংগঠন সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্তটা নিয়েছে। রোকেয়া প্রাচী অভিযোগ করার আগেই ফেসবুকে প্রসূনের স্ট্যাটাস দেখে অলিক অনেকবার বিষয়টি বন্ধ করার জন্য বলেছে। সে কোনো সংগঠনকে পাত্তাই দিচ্ছে না। সংগঠন তার কাছে কোনো ফ্যাক্টরই না। সংগঠন তার কথা চিন্তা করবে কেন? সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাকে তিন দিনের সময় দেওয়া হয়েছিল। সে কোনো ধরনের রেসপন্স করেনি। সংগঠন না মানলে সংগঠন তাকে কিভাবে মানবে? আর তার স্ট্যাটাসে সে অনেক আজেবাজে কথা লিখেছে। একটা স্ট্যাটাসে সে তো ‘রোকেয়া পাপী’ লিখতে পারে না। সে প্রথমত অন্যায় করেছে দেড় ঘণ্টা দেরি করে আর সঙ্গে করে এক কাজিন নিয়ে গেছে। তাকে তো এটা আগে থেকে জানিয়ে রাখতে হবে। ডিরেক্টরের পারমিশন লাগবে না! সঠিক কথা বললে তোমার ইগোতে লাগবে আর তুমি শুটিং ছেড়ে চলে যাবে—এটা তো হয় না। পৃথিবীতে এ রকম অনেক ঘটনা আছে। ভারতে অনেক বড় বড় আর্টিস্টকে বের করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশেও এমন ঘটনা নতুন নয়। তবে এক বছরের নিষেধাজ্ঞায় পড়তে হয়নি কাউকে। সে যদি বলে চার শ ডিরেক্টরের মধ্যে কোনো ‘গতিশীল ডিরেক্টর’ নাই, তাহলে নাসির উদ্দীন ইউসুফ, আমজাদ হোসেন—এঁরা কেউ ডিরেক্টর না! কাজ করার মন-মানসিকতা থাকলে এই ধরনের কথাবার্তা বলত না। এক বছর পর নাটকে ফিরবে কি না, সেটা ডিপেন্ড করবে তার এখনকার অ্যাকটিভিটির ওপর। এক বছর ওকে দেখব। আমরা কোনো শিল্পীর বিরুদ্ধে নই। অশিল্পীসুলভ আচরণের জন্যই তাকে বয়কট করা হয়েছে..............

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

thanks for your nice comments............


b.reg
ANIK SABBIR